Admission
পদার্থবিদ্যা - পদার্থবিজ্ঞান – ২য় পত্র - তড়িতচৌম্বক আবেশ ও পরিবর্তী প্রবাহ
Please, contribute to add content into তড়িতচৌম্বক আবেশ ও পরিবর্তী প্রবাহ.
Content

দণ্ড চুম্বকটি কুণ্ডলীর নিকটে স্থির থাকা অবস্থায় গ্যালভানোমিটারের কাঁটার কোন্ বিক্ষেপ হয় না, অর্থাৎ কুণ্ডলীতে কোনো তড়িৎ প্রবাহিত হয় না। কিন্তু যখন চুম্বকটি কুণ্ডলীর সাপেক্ষে গতিশীল তখন গ্যালভানোমিটারের কাঁটা বিক্ষিপ্ত হয়, অর্থাৎ কুণ্ডলীতে তড়িৎ প্রবাহের উপস্থিত নির্দেশ করে। তুমি যদি চুম্বকটিকে স্থির রেখে কুণ্ডলীটিকে চুম্বকের দিকে আনা নেয়া করতে তাহলেও একই ফল পেতে। অর্থাৎ চুম্বক ও কুগুলীর মধ্যে আপেক্ষিক গতির ফলে কুণ্ডলীতে তড়িৎ প্রবাহ উৎপন্ন হয়েছে।

চৌম্বকক্ষেত্রের সাহায্যে বন্ধ বর্তনী বা কুণ্ডলীতে তড়িচ্চালক শক্তি বা তড়িৎপ্রবাহ উৎপন্ন করা যায়। এর জন্য প্রয়োজন হয় গতিশীল চুম্বক বা তড়িৎবাহী বর্তনী । গতিশীল চুম্বক বা তড়িৎবর্তনী দ্বারা কোনো বদ্ধ বর্তনীতে তড়িচ্চালক শক্তি উৎপন্ন হওয়ার ঘটনাকে ভাড়িতচৌম্বকীয় আবেশ বা তড়িচ্চুম্বকীয় আবেশ বলে।

একটি গতিশীল চুম্বক বা তড়িৎবাহী বর্তনীর সাহায্যে অন্য একটি বন্ধ বর্তনীতে ক্ষণস্থায়ী তড়িচ্চালক শক্তি ও তড়িৎ প্রবাহ উৎপন্ন হওয়ার পদ্ধতিকে তাড়িতচৌম্বকীয় আবেশ বলে। একে তাড়িতচৌম্বক আবেশও বলা হয়।

চুম্বকের সাহায্যে তড়িৎশক্তি উৎপাদন

চুম্বকের দুই মেরুর মাঝখানে আয়তাকার কুণ্ডলীকে ক্রমাগত ঘুরিয়ে কুণ্ডলীতে নিরবচ্ছিন্ন তড়িৎ প্রবাহ পাওয়া যায় যা ৫.১২ অনুচ্ছেদে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। ডায়নামো, জেনারেটর ও বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে এই নীতির উপর ভিত্তি করেই তড়িৎ শক্তি উৎপন্ন করা হয়।

আবিষ্ট তড়িচ্চালক শক্তি

শুধু চুম্বকের সাহায্যেই যে বন্ধ বর্তনীতে তড়িৎপ্রবাহ আবিষ্ট হয়, তা নয়। একটি তড়িত্ৰাহী ৰতনীর সাহায্যেও অন্য বর্তনীতে তড়িৎপ্রবাহ আবিষ্ট করা যায়।

আমরা জানি, তড়িৎ প্রবাহের জন্য তড়িচ্চালক শক্তির প্রয়োজন। উপরে বর্ণিত পরীক্ষাগুলো থেকে দেখো যায় এই তড়িৎ প্রবাহের জন্য কোনো তড়িচ্চালক শক্তির উৎস নেই। তাহলে তড়িৎ প্রবাহিত হয় কীভাবে? আসলে কোনো চুম্বক বা তড়িৎবাহী বর্তনী এবং কুণ্ডলীর মধ্যে আপেক্ষিক গতির ফলে কুণ্ডলীতে তড়িচ্চালক শক্তির উদ্ভব হয় যা তড়িৎ প্রবাহ চালনা করে। একেই আৰিষ্ট তড়িচ্চালক শক্তি বলা হয়। কোনো চুম্বক বা তড়িৎবাহী বর্তনী এবং বদ্ধ বর্তনী বা কুণ্ডলীর মধ্যে আপেক্ষিক গতির ফলে বন্ধ বর্তনী বা কুণ্ডলীতে যে তড়িচ্চালক শক্তির উদ্ভব হয় তাকে আৰিষ্ট তড়িচ্চালক শক্তি বলে। এই আবিষ্ট তড়িচ্চালক শক্তির মান হয় কুণ্ডলীর সাথে সংশ্লিষ্ট চৌম্বক ফ্লাক্সের পরিবর্তনের হারের সমান যা ৫.৬ অনুচ্ছেদের বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে।

চৌম্বক ফ্লাক্স (Magnetic Flux)

আমরা জানি, একটি গতিশীল আধান বা স্থায়ী চুম্বক তার চারপাশে চৌম্বকক্ষেত্র সৃষ্টি করে। চৌম্বকক্ষেত্র বিদ্যমান এমন কোনো স্থানে কোনো তল কল্পনা করলে তার সাথে চৌম্বক ফ্লাক্স সংশ্লিষ্ট থাকে বা ঐ তল দিয়ে চৌম্বক ফ্লাক্স অতিক্রম করে।

 কোন তলের ক্ষেত্রফলের সাথে ঐ তলের লম্ব বরাবর চৌম্বকক্ষেত্রের উপাংশ গুণ করলে চৌম্বক ফ্লাক্স পাওয়া যায় । কোনো ভলের ক্ষেত্রফল এবং ঐ তলের লম্ব বরাবর চৌম্বকক্ষেত্রের উপাংশের গুণফলকে ঐ তলের সাথে সংশ্লিষ্ট চৌম্বক ফ্লাক্স বলে।

কোনো তলের ক্ষেত্রফল A এবং ঐ তলের লম্ব বরাবর চৌম্বকক্ষেত্র B হলে [চিত্র ৫.১ (ক)] চৌম্বক ফ্লাক্স

চিত্র :৫.১

Φ = AB

কিন্তু যদি চৌম্বকক্ষেত্র তলের লম্ব বরাবর ক্রিয়া না করে লম্বের সাথে θ কোণে ক্রিয়া করে [চিত্র ৫.৪ (খ) তাহলে ঐ তলের লম্ব বরাবর চৌম্বকক্ষেত্রের উপাংশ হবে B θ । সুতরাং চৌম্বক ফ্লাক্স হবে,Φ = AB θ...  (5.2)

 এখন A কে একটি ভেক্টর হিসেবে গণ্য করা হয় যার মান A ঐ তলের ক্ষেত্রফল নির্দেশ করে এবং দিক হয় ঐ তলের লম্ব বরাবর বহির্মুখী। সুতরাং উপরিউক্ত সমীকরণের θ হলো ক্ষেত্রফল ভেক্টরA  এবং চৌম্বকক্ষেত্র B এর অন্তর্ভুক্ত কোণ এবং এই সমীকরণ দাঁড়ায়,

Φ = A. B..  (5.3)

সুতরাং ক্ষেত্রফল ভেক্টর ও চৌম্বকক্ষেত্র এর স্কেলার গুণফল দ্বারা চৌম্বক ফ্লাক্স পরিমাপ করা হয়। (5.3) সমীকরণ থেকে দেখা যায়, চৌম্বক ফ্লাক্স একটি স্কেলার রাশি। শিলার গুণফল দ্বারা চৌম্বক ফ্লাক্স একটি স্কেলার রাশি।

(5.2) সমীকরণ থেকে দেখা যায়, চৌম্বক ফ্লাক্সের একক হচ্ছে টেসলা মিটার (T m2)। একে ওয়েবার (Wb) ও বলা হয়।

:- 1 Wb = 1 t m2

ওয়েবারের সংজ্ঞা কিন্তু এই সমীকরণ থেকে দেয়া হয় না। এস. আই. তে ওয়েবারের যে সংজ্ঞা দেয়া হয় তা ৫.৬ অনুচ্ছেদে বর্ণনা করা হয়েছে।

কোনো কুণ্ডলীর সাথে সংশ্লিষ্ট চৌম্বক ফ্লাক্স 10 Wb বলতে বোঝায় ঐ কুণ্ডলীর ক্ষেত্রফল 1m2 হলে কুণ্ডলীর তলের লম্ব বরাবর চৌম্বকক্ষেত্রের উপাংশ হচ্ছে 10 T ।

Content added || updated By
চৌম্বক প্রবণতা
চৌম্বক প্রবেশ্যতা
আপেক্ষিক চৌম্বক প্রবেশ্যতা
চৌম্বক তীব্রতা
চৌম্বক গ্রহীতা

    তাড়িতচৌম্বক আবেশ সংক্রান্ত বিভিন্ন পরীক্ষা থেকে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো লক্ষ্য করা যায়।

(১) চুম্বক ও কুণ্ডলীর মধ্যে আপেক্ষিক গতির ফলে গ্যালভানোমিটারে বিক্ষেপ বর্তনীতে তড়িচ্চালক শক্তি তথা তড়িৎ প্রবাহের অস্তিত্ব প্রমাণ করে। এই তড়িচ্চালক শক্তিকে আবিষ্ট তড়িচ্চালক শক্তি এবং প্রবাহকে আবিষ্ট তড়িৎ প্রবাহ বলে।

(২) চুম্বক ও কুণ্ডলীর মধ্যবর্তী আপেক্ষিক গতি বন্ধ হয়ে গেলে গ্যালভানোমিটারে বিক্ষেপ শূন্য হয়। আপেক্ষিক দ্রুতি যত বেশি হয় বিক্ষেপের পরিমাণও তত বৃদ্ধি পায়। সুতরাং বলা যায়, চুম্বক ও কুণ্ডলীর মধ্যবর্তী আপেক্ষিক গতি যতক্ষণ থাকে আবিষ্ট তড়িৎপ্রবাহও ততক্ষণ স্থায়ী হয় এবং এর মান আপেক্ষিক বেগের মানের উপর নির্ভর করে।

(৩) চুম্বকের মেরু পরিবর্তন করলে আবিষ্ট তড়িৎপ্রবাহের দিকও পরিবর্তিত হয়। চুম্বকের মেরু শক্তি বৃদ্ধি করলে আবিষ্ট তড়িৎপ্রবাহের পরিমাণও বৃদ্ধি পায়।

(৪) মুখ্য কুণ্ডলীতে প্রবাহের সূচনা ও সমাপ্তির সময়ে গৌণ কুণ্ডলীতে আবিষ্ট তড়িৎপ্রবাহ দেখা যায়। মুখ্য কুণ্ডলীতে প্রবাহের পরিবর্তন হলেও গৌণ কুণ্ডলীতে তড়িৎপ্রবাহ আবিষ্ট হয় ।

এই সকল পর্যবেক্ষণ থেকে তাড়িতচৌম্বক আবেশ সংক্রান্ত ফারাডে দুটি এবং লেঞ্জ একটি সূত্র প্রদান করেন। এগুলো তাড়িতচৌম্বক আবেশ সংক্রান্ত সূত্র নামে পরিচিত। ফ্যারাডের প্রথম সূত্র থেকে আবিষ্ট তড়িৎ প্রবাহের কারণ এবং দ্বিতীয় সূত্র থেকে আবিষ্ট তড়িৎ প্রবাহের মান পাওয়া যায়। আর লেঞ্জের সূত্র থেকে পাওয়া যায় আবিষ্ট তড়িৎ প্রবাহের দিক।

Content added || updated By

  প্রথম সূত্র : যখনই কোনো বন্ধ কুণ্ডলীর মধ্যদিয়ে অতিক্রান্ত চৌফ ক্ষেত্ররেখার মোট সংখ্যা বা চৌক ফ্রান্সের পরিবর্তন ঘটে, তখনই কৃষ্ণলীতে একটি ক্ষণস্থায়ী তড়িচ্চালক শক্তি তথা তড়িৎ প্রবাহ আবিষ্ট হয়। যতক্ষণ চৌম্বক ফ্লাক্স বা ক্ষেত্ররেখার পরিবর্তন ঘটে, আৰিষ্ট তড়িচ্চালক শক্তি তথা প্রবাহ ততক্ষণই স্থায়ী হয়। 

  ক্ষেত্ররেখার সংখ্যা বৃদ্ধিতে তড়িৎপ্রবাহ যেদিকে ঘটে সংখ্যা হ্রাস পেলে তড়িৎপ্রবাহের অভিমুখ তার বিপরীত হয় । 

   দ্বিতীয় সূত্র : কোনো বদ্ধ কুণ্ডলীতে আবিষ্ট তড়িচ্চালক শক্তির মান ঐ কুঙ্গীর মধ্যদিয়ে অতিক্রান্ত চৌম্বক ফ্রান্সের পরিবর্তনের হারের ঋণাত্মক মানের সমানুপাতিক।

ধরা যাক,

ϕ1 = কোনো নির্দিষ্ট মুহূর্তে কোনো বদ্ধ কুণ্ডলী বা বর্তনী দিয়ে অতিক্রমকারী চৌম্বক ফ্লাক্স । 

ϕ2 = 1 সময় পর ঐ কুণ্ডলী বা বর্তনী দিয়ে অতিক্রান্ত চৌম্বক ফ্লাক্স ।

সুতরাং t সময়ে চৌম্বক ফ্লাক্সের পরিবর্তন = φ1-φ2 এবং চৌম্বক ফ্লাক্স পরিবর্তনে হার = φ2-φ1t

 ফ্যারাডের দ্বিতীয় সূত্র অনুসারে আবিষ্ট তড়িচ্চালক শক্তি,

 E-φ2-φ1t

বা, E=-Kφ2-φ1t..  (5.4)

এখানে K হলো সমানুপাতিক ধ্রুবক। এর মান নির্ভর করে রাশিগুলোর এককের উপর। এই সমীকরণ থেকে এস. আই. পদ্ধতিতে চৌম্বক ফ্লাক্সের এককের সংজ্ঞা দেয়া হয়। এই একককে বলা হয় ওয়েবার (Wb)। এই এককের সংজ্ঞা এমনভাবে দেয়া হয় যাতে K এর মান 1 হয়। যখন t= 1s, E = 1V এবং φ2 = 0 তখন φ1 = 1 Wb ধরলে উপরিউক্ত সমীকরণের K = 1 হয়।

এক পাকের একটি কুণ্ডলীর সাথে সংশ্লিষ্ট যে পরিমাণ চৌম্বক ফ্লাক্স 1 সেকেন্ডে সুষমভাবে হ্রাস পেয়ে শূন্যতে নেমে আসলে ঐ কুণ্ডলীতে 1 ভোল্ট তড়িচ্চালক শক্তি আবিষ্ট হয় সেই পরিমাণ চৌম্বক ফ্লাক্সকে 1 ওয়েবার (1Wb) বলে।

সুতরাং 1 Wb = 1V x 1s

K = 1 হওয়ায় (5.4) সমীকরণ দাঁড়ায়

E-φ2-φ1t

বিয়োগ চিহ্ন আবিষ্ট তড়িচ্চালক শক্তির অভিমুখ নির্দেশ করে। একটি এক পাকবিশিষ্ট কোনো কুণ্ডলী দিয়ে t সময়ে অতিক্রান্ত চৌম্বক ফ্লাক্স Ψ হলে, 

চৌম্বক ফ্লাক্সের তাৎক্ষণিক পরিবর্তনের হার = dϕdt

সুতরাং ফ্যারাডের দ্বিতীয় সূত্র অনুসারে লেখা যায়, 

=-dφdt

কুন্ডলীর পাক সংখ্যা N হলে মোট চোষক ফ্লাক্স হবে N φ

=-dφdt

Content added || updated By

 আবিষ্ট তড়িৎ প্রবাহের দিক নির্ণয়ের জন্য বিজ্ঞানী লেঞ্জ একটি সূত্র প্রদান করেন। এটি লেঞ্জের সূত্র নামে পরিচিত। এই সূত্রটিকে তাড়িতচৌম্বক আবেশের তৃতীয় সূত্রও বলা হয়। 

সূত্র : যে কোনো ভাড়িতচৌম্বক আবেশের বোর জাবিষ্ট তড়িচ্চালক শক্তি যা প্রবাহের দিক এমন হয় যে, তা সৃষ্টি হওয়া মাত্রই যে কারণে সৃষ্টি হয় সেই কারণকেই বাধা দেয়। 

সুতরাং লেঞ্জের সূত্র থেকে আমরা আবিষ্ট তড়িচ্চালক শক্তি ও প্রবাহের দিক জানতে পারি। 

(5.6) সমীকরণের  Ndφdtরাশির আগে যে ঋণাত্মক চিহ্ন বসানো হয়েছে এ কারণেই। সুতরাং

=-Ndφdt… (5.7)

লেঞ্জের সূত্রের ব্যাখ্যা

চিত্র :৫.৬

    দক্ষিণ মেরু যখন ভেতরে প্রবেশ করা হয় তখন গ্যালভানোমিটারের কাঁটা বাম দিকে সরে যাবে। এর অর্থ বর্তনীতে তড়িৎ প্রবাহিত হচ্ছে A থেকে B এর দিকে। আবিষ্ট তড়িৎ প্রবাহের উপস্থিতি নির্দেশ করছে বর্তনীতে আবিষ্ট তড়িচ্চালক শক্তির উদ্ভব হয়েছে যার ফলে বর্তনীতে তড়িৎ প্রবাহিত হচ্ছে। ডান দিক থেকে দেখলে দেখা যাবে যে কুণ্ডলীতে আৰ্টিষ্ট প্রবাহ ঘড়ির কাঁটার গতির দিকে চলছে (চিত্র ৫.৬)।

   চুম্বকটিকে যখন কুণ্ডলীর মধ্যে স্থির অবস্থায় রাখা হয় তখন গ্যালভানোমিটারের কাঁটা নড়বে না। এর অর্থ হচ্ছে বর্তনীতে কোনো আবিষ্ট প্রবাহ নেই।

দক্ষিণ মেরুকে কুণ্ডলী থেকে বাইরে নেওয়ার সময় গ্যালভানোমিটারের কাঁটা ডান দিকে সরে যাবে। এর অর্থ বর্তনীতে তড়িৎ প্রবাহিত হচ্ছে B থেকে A এর দিকে। আবিষ্ট তড়িৎ প্রবাহের দিক পূর্ববর্তী প্রবাহের বিপরীত তাই গ্যালভানোমিটারের কাঁটার বিচ্যুতিও বিপরীতমুখী । ডান দিক থেকে দেখলে দেখা যাবে যে, কুণ্ডলীতে আবিষ্ট প্রবাহ ঘড়ির কাঁটার গতির বিপরীত দিকে চলছে (চিত্র ৫.৭)

চিত্র :৫.৭

ধরা যাক, একটি দণ্ড চুম্বকের দক্ষিণ মেরুকে একটি তারের কুণ্ডলীর দিকে নেওয়া হচ্ছে [চিত্র ৫.৮]। তাড়িত চৌম্বক আবেশের ফলে কুণ্ডলীতে তড়িৎপ্রবাহের উদ্ভব হবে। এখন এই তড়িৎপ্রবাহের অভিমুখ এমন হবে যেন তা তার উৎপত্তির কারণ অর্থাৎ চুম্বকের গতিকে বাধা দিবে। 

 চিত্র :৫.৮

   এটি সম্ভব যদি দক্ষিণ মেরুর সম্মুখস্থ কুণ্ডলীর তলে দক্ষিণ মেরুর উদ্ভব হয়। এখন সলিনয়েডের নিয়ম থেকে আমরা জানি যে, যেদিক থেকে দেখলে কুণ্ডলীতে তড়িৎ প্রবাহ ঘড়ির কাঁটার গতির দিকে প্রবাহিত হয় সেদিকটি হবে দক্ষিণ মেরু। সুতরাং চুম্বকটিকে বিকর্ষণ করতে হলে কুণ্ডলীতে আবিষ্ট প্রবাহ ঘড়ির কাঁটা যেদিকে ঘুরে সেদিক বরাবর চলবে। আবার চুম্বকের দক্ষিণ মেরুটিকে কুণ্ডলী থেকে দূরে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলে কুণ্ডলীটি চুম্বকটিকে আকর্ষণ করবে। সুতরাং প্রবাহের দিক এমন হবে যেন চুম্বকের নিকটবর্তী কুণ্ডলী তলে উত্তর মেরুর আবির্ভাব হয়। সেটি একমাত্র সম্ভব যদি কুণ্ডলীতে আবিষ্ট তড়িৎ প্রবাহের অভিমুখ ঘড়ির কাঁটা যেদিকে ঘুরে তার বিপরীত দিকে হয়। এভাবে আমরা আবিষ্ট তড়িচ্চালক শক্তি ও তড়িৎ প্রবাহের দিক নির্ণয় করতে পারি ।

লেঞ্জের সূত্র এবং শক্তির নিত্যতা

Lenz's Law and Conservation of Energy

       তাড়িতচৌম্বক আবেশের ফলে আমরা দেখতে পাই যে, কোনো বন্ধ কুণ্ডলীতে তড়িচ্চালক শক্তির উৎস ছাড়াই তড়িৎ প্রবাহ উৎপন্ন হচ্ছে। আপাতদৃষ্টিতে এটি শক্তির নিত্যতার সূত্রের ব্যতিক্রম বলে মনে হয়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তাড়িতচৌম্বক আবেশে শক্তির নিত্যতা সূত্র বিরোধী কোন ঘটনা ঘটে না। লেঞ্জের সূত্র থেকেই আমরা তা প্রমাণ করতে পারি। লেঞ্জের সূত্র থেকে আমরা জানি, কোনো কুণ্ডলীতে আবিষ্ট তড়িচ্চালক শক্তি এর সৃষ্টির কারণকেই বাধা দেয় । কোনো কুণ্ডলী ও চুম্বকের মধ্যবর্তী আপেক্ষিক গতির জন্য কুণ্ডলীতে আবিষ্ট তড়িৎপ্রবাহের উদ্ভব হয় যা ঐ আপেক্ষিক গতিকে বাধা দেয়। সুতরাং ঐ গতি বজায় রাখার জন্য সর্বদা কিছু যান্ত্রিক শক্তি ব্যয় করতে হয়। এই যান্ত্রিক শক্তিই তড়িৎ শক্তিতে রূপান্তরিত হয়ে কুণ্ডলীতে তড়িৎ প্রবাহের সৃষ্টি করে। সুতরাং তড়িৎপ্রবাহের চৌম্বক ক্রিয়া শক্তির নিত্যতা সূত্র মেনে চলে।

Content added || updated By

আমরা জানি, কোনো রোধকের এক প্রান্ত যদি একটি তড়িৎ কোষের ধনাত্মক পাতের সাথে এবং অপর প্রান্ত যদি ঋণাত্মক পাতের সাথে সংযুক্ত করা হয়, তাহলে ঐ তড়িৎ কোষ ঐ রোধের মধ্যদিয়ে একই দিকে স্থির মানের তড়িৎ প্রবাহ প্রেরণ করে। এই ধরনের তড়িৎ প্রবাহকে সমপ্রবাহ বা একমুখী প্রবাহ (direct current) বলে। এখন যদি কোষের প্রান্তদ্বয়ের স্থান বিনিময় করে রোধকের সাথে সংযুক্ত করা হয়, তাহলে এ রোধকের মধ্যদিয়ে তড়িৎ প্রবাহ বিপরীত দিকে চলবে। যদি এভাবে বার বার তড়িৎ কোষের মেরুর সাথে সংযোগ পরিবর্তন করা হয়, তাহলে রোধকের মধ্যদিয়ে তড়িৎ প্রবাহের দিক বার বার পরিবর্তিত হবে। এখন তড়িৎ প্রবাহ যদি নির্দিষ্ট সময় পর পর দিক পরিবর্তন করে এবং তড়িৎ প্রবাহের মানও পর্যায়ক্রমে কম বেশি হয়, তাহলে সেই প্রবাহকে দিক পরিবর্তী প্রবাহ বা পর্যাবৃত্ত প্রবাহ ( alternating current) বলা হয় । আর যে তড়িচ্চালক শক্তির ক্রিয়ায় বর্তনীতে দিক পরিবর্তী প্রবাহ চলে সেই তড়িচ্চালক শক্তিকে দিক পরিবর্তী তড়িচ্চালক শক্তি বা পর্যাবৃত্ত তড়িচ্চালক শক্তি বলা হয়। 

দিক পরিবর্তী প্রবাহ : কোনো বর্তনীতে তড়িৎ প্রবাহ যদি একটি নির্দিষ্ট সময় পর পর দিক পরিবর্তন করে এবং নির্দিষ্ট সময় পর পর সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন মান প্রাপ্ত হয়, সেই তড়িৎ প্রবাহকে দিক পরিবর্তী তড়িৎ প্রবাহ বলে। 

 

দিক পরিবর্তী তড়িচ্চালক শক্তি : যে তড়িচ্চালক শক্তির ক্রিয়ায় কোন বর্তনীতে তড়িৎপ্রবাহ একটি নির্দিষ্ট সময় পর পর দিক পরিবর্তন করে এবং নির্দিষ্ট সময় পর পর সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন মান প্রাপ্ত হয় সেই তড়িচ্চালক শক্তিকে দিক পরিবর্তী তড়িচ্চালক শক্তি বলে।

আমরা জানি, কোনো বদ্ধ কুণ্ডলীকে একটি সুষম চৌম্বকক্ষেত্রে ω কৌণিক বেগে ঘুরানো হলে কুণ্ডলীতে দিক পরিবর্তী তড়িচ্চালক শক্তি আবিষ্ট হয়। সবচেয়ে পরিচিত দিক পরিবর্তী তড়িচ্চালক শক্তি সময়ের সাথে সাইন সদৃশ্যভাবে (sinusodially) পরিবর্তিত হয় এবং তা নিচের সমীকরণ দিয়ে প্রকাশ করা যায়,

চিত্র :৫.১২

ε=εo sin ωt

এখানে

ε= যে কোনো সময় t তে আবিষ্ট তড়িচ্চালক শক্তির মান ।

 εo= আবিষ্ট তড়িচ্চালক শক্তির সর্বোচ্চ বা শীর্ষ মান

ω = উৎসের কৌণিক বেগ তথা তড়িচ্চালক শক্তির কৌণিক কম্পাঙ্ক ।

এই তড়িৎ প্রবাহ যদি R রোধবিশিষ্ট কোনো বর্তনীতে প্রয়োগ করা হয় [চিত্র ৫.১২] তাহলে ঐ বর্তনীতে তড়িৎ প্রবাহ

I=εR=εoR sin ωt 

এখানে Io =εoR তড়িৎ প্রবাহের সর্বোচ্চ বা শীর্ষ মান।

চিত্র :৫.১৩

সময়ের সাথে সাথে দিক পরিবর্তী প্রবাহ কীভাবে পরিবর্তিত হয় তা ৫.১৩ চিত্রে দেখানো হলো।

দিক পরিবর্তী তড়িচ্চালক শক্তি বা তড়িৎ প্রবাহের পর্যায়কাল T এবং কম্পাঙ্ক f হলে,

ω=2πT=2πf

দিক পরিবর্তী প্রবাহ বা তড়িচ্চালক শক্তির ক্ষেত্রে তড়িচ্চালক শক্তিকে E এর পরিবর্তে £ দ্বারা প্রকাশ করা হয়।

 

দিক পরিবর্তী তড়িৎ প্রবাহ সৃষ্টি Production of Alternating Current

দিক পরিবর্তী তড়িৎ প্রবাহ সৃষ্টির যান্ত্রিক ব্যবস্থা : ৫.১৪ চিত্রে দিক পরিবর্তী তড়িৎ প্রবাহ সৃষ্টির যান্ত্রিক ব্যবস্থা দেখানো হয়েছে যা এসি ডায়নামো নামেও পরিচিত। এতে একটি চুম্বক NS থাকে। একে ক্ষেত্র চুম্বক (field magnet) বলে। চুম্বকের মধ্যবর্তী স্থানে একটি কাঁচা লোহার পাতের উপর একটি তারের আয়তাকার কুণ্ডলী (চিত্রে CD) থাকে। কাঁচা লোহার পাতটিকে আর্মেচার বলে। আর্মেচারটিকে চুম্বকের দুই মেরুর মধ্যবর্তী স্থানে যান্ত্রিক উপায়ে সমদ্রুতিতে ঘুরানো হয় । আয়তাকার কুন্ডলীর দুই প্রান্ত দুটি স্লিপ রিং-এর সাথে সংযুক্ত থাকে। স্লিপ রিং দুটি আর্মেচারের সাথে একই অক্ষ বরাবর ঘুরতে পারে। দুটি কার্বন নির্মিত ব্রাশ এমনভাবে স্থাপন করা হয় যেন তারা যখন আর্মেচার ঘুরতে থাকে তখন স্লিপ রিং দুটিকে স্পর্শ করে থাকে। ব্রাশ দুটির সাথে বহিবর্তনী R সংযুক্ত থাকে ।

চিত্র : ৫.১৪

 

তড়িৎ প্রবাহ সৃষ্টি :

 যখন আর্মেচারটিকে ঘুরানো হয় তখন আর্মেচার কুণ্ডলী চৌম্বকক্ষেত্রের ক্ষেত্ররেখাগুলোকে ছেদ করে এবং তাড়িতচৌম্বক আবেশের নিয়মানুযায়ী কুণ্ডলীতে তড়িচ্চালক শক্তি আবিষ্ট হয়। এখন কুণ্ডলীটির দুই প্রান্ত বহির্বর্তনীর সাথে সংযুক্ত থাকায় বর্তনীতে পর্যাবৃত্ত বা দিক পরিবর্তী তড়িৎ প্রবাহের উৎপত্তি হয়। আবিষ্ট তড়িৎ প্রবাহের মান প্রধানত চৌম্বকক্ষেত্রের মান ও কুগুলীর কৌণিক বেগের উপর নির্ভর করে। কুণ্ডলীর একবার পূর্ণ ঘূর্ণনে এর মধ্যে আবিষ্ট তড়িৎ প্রবাহের অভিমুখ একবার পরিবর্তিত হয়। এভাবে আমরা যান্ত্রিক শক্তি থেকে দিক পরিবর্তী প্রবাহ উৎপন্ন করতে পারি। আর্মেচার কুণ্ডলীটি চৌম্বকক্ষেত্র B তে ω কৌণিক বেগে ঘুরতে থাকলে, t সময়ে চৌম্বক ফ্লাক্স φ হলে   φ= NBA cos ωt, যেখানে আর্মেচারের পাক সংখ্যা, A কুণ্ডলীর ক্ষেত্রফল। আবিষ্ট তড়িচ্চালক শক্তি

Content added || updated By

  যে কোনো সময় ব্যবধানের দিক পরিবর্তী তড়িৎ প্রবাহের সকল মানের বর্গের গড়কে ঐ সময় ব্যবধানের তড়িৎ প্রবাহের গড় বর্গ মান বলে। আমরা জানি, ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র সময় ব্যবধানের তড়িৎ প্রবাহের বর্গের মান ও সময় ব্যবধানের গুণফলের সমষ্টি নিয়ে তাকে মোট সময় ব্যবধান দিয়ে ভাগ করলে ঐ সময় ব্যবধানের তড়িৎ প্রবাহের গড় বর্গ মান পাওয়া যায়।

পর্যায়কাল T হলে একটি পূর্ণচক্রের জন্য তড়িৎ প্রবাহের গড় বর্গ মান হবে

I2¯=1T0TI2 dt

আমরা জানি, দিক পরিবর্তী তড়িৎ প্রবাহ I হলো

I=Iο sin ωt

এখানে I = তড়িৎ প্রবাহের শীর্ষ মান।

ω = কৌণিক কম্পাঙ্ক।

দিক পরিবর্তী তড়িৎ প্রবাহের বর্গমূলীয় গড় মান বা কার্যকর তড়িৎ প্রবাহ দিক পরিবর্তী তড়িৎ প্রবাহের বর্গের গড় মানের বর্গমূলকে দিক পরিবর্তী তড়িৎ প্রবাহের বর্গমূলীর পড় মান বা কার্যকর (effective) বা আপাত (virtual) প্রবাহ বলে। সুতরাং

Irms=r2=I2o2=Io2=0.707 I

সুতরাং দিক পরিবর্তী তড়িৎ প্রবাহের বর্গমূলীয় গড় মান = 12× শীর্ষ মান ।

অর্থাৎ পূর্ণচক্রে দিক পরিবর্তী তড়িৎ প্রবাহের বর্গমূলীয় গড় মান এর শীর্ষ মানের 0.707 গুণ বা 70.7%

আমাদের দেশে বাড়ি ঘরে এ.সি. তড়িৎ সরবরাহ করা হয়। এই সরবরাহ ভোল্টেজের মান 220V। এ মান এর বর্গমূলীয় গড় মান বা Erms নির্দেশ করে। অর্থাৎ

εrms= 220 V

:- শীর্ষমান, εo=εrms×2= = 220V x V2 = 311 V

কোনো ব্যক্তি যদি 220V ডি. সি. শক পান তাহলে তা 220 V দ্বারা হবে, কিন্তু 220 V এ.সি. শক পেলে তিনি সর্বাধিক শক পাবেন 311 V এর যা 220 V এর শক এর চেয়ে অনেক বেশি। তাই এ. সি. লাইনে কাজ করার সময় অধিকতর সতর্কতা অবলম্বন প্রয়োজন।

এ. সি. বর্তনীতে উত্তাপজনিত শক্তি ক্ষয়

Energy loss due to heat in an A. C. Circuit

আমরা জানি, কোনো রোধকের মধ্য দিয়ে তড়িৎ প্রবাহিত হলে তড়িৎ শক্তি তাপ শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। তাপশক্তি রূপান্তরের হারকে ক্ষমতা P দিয়ে বোঝানো হয়, যেখানে

P= l2 R…(5.26)

এখানে I হলো রোধকে তাৎক্ষণিক তড়িৎ প্রবাহ। যেহেতু তড়িৎ প্রবাহের ফলে উৎপন্ন তাপ তড়িৎ প্রবাহের বর্গের সমানুপাতিক, সুতরাং তড়িৎ প্রবাহ সমপ্রবাহ না দিক পরিবর্তী প্রবাহ অর্থাৎ তড়িৎ প্রবাহের অভিমুখ ধনাত্মক না ঋণাত্মক তাতে ক্ষমতা P এর মানের কোনো পরিবর্তন হবে না। কিন্তু দিক পরিবর্তী প্রবাহের সর্বোচ্চ মান lo দ্বারা উৎপন্ন ভাপ তারই সমান সমপ্রবাহ দ্বারা সৃষ্ট তাপের সমান নয়। কোনো পূর্ণচক্রে দিক পরিবর্তী প্রবাহের সর্বোচ্চ মান অত্যন্ত অল্প সময় বা ক্ষণিকের জন্য অবস্থান করে বলে এরূপ হয়। পরিবর্তী প্রবাহের গড় বর্গের বর্গমূল মানকে সেই পরিমাণ সমপ্রবাহ মনে করা যায় যা কোনো নির্দিষ্ট রোধে পরিবর্তী প্রবাহের ন্যায় একই হারে তাপ উৎপন্ন করতে পারে । ভাই কোনো এ. সি. বর্তনীতে উত্তাপজনিত শক্তি ক্ষয়ের হার,

P= I2rms R… (5.27)

সমীকরণ (5.26) ও (5.27) থেকে দেখা যায় যে, সমপ্রবাহের ক্ষেত্রে, সমপ্রবাহের মান -এর যে ভূমিকা; দিক পরিবর্তী প্রবাহের ক্ষেত্রে lrms -এর একই ভূমিকা।

ধরা যাক, কোন এ.সি. প্রবাহের Irms = 5A কোনো রোধের মধ্য দিয়ে চালনা করলে যে হারে তাপ উৎপন্ন হয় উক্ত রোধের মধ্য দিয়ে 5A ডি.সি. প্রবাহ চালনা করলেও একই মাত্রার তাপ উৎপন্ন হবে।

সুতরাং কোনো দিক পরিবর্তী বর্তনীতে গুরুত্বপূর্ণ হলো তড়িৎ প্রবাহের গড় মান। যেহেতু একটি পূর্ণ বর্তনীতে তড়িৎ প্রবাহের গড় মান শূন্য, কাজেই তড়িৎ প্রবাহের বর্গের গড়ের বর্গমূলকেই এই প্রতিনিধিত্ব মান হিসেবে ধরা হয়।

সুতরাং তড়িৎ প্রবাহের এই গড়বর্গের বর্গমূল মানকে (rms value) কার্যকর প্রবাহ বা আপাত প্রবাহ বলে।

গড় মান =2π

22π× গড় বর্গের বর্গমূল মান

আকৃতি গুণাঙ্ক

 দিক পরিবর্তী তড়িচ্চালক শক্তি বা প্রবাহের গড় বর্গের বর্গমূল মান ও গড়মানের অনুপাতকে আকৃতি গুণাঙ্ক বলে।

:- আকৃতি গুণাঙ্ক = গড় বর্গের বর্গমূল মান/গড় মান

IrmsI

Content added || updated By

   কোনো বর্তনীতে [চিত্র ৫.৯] যদি শুধু একটি কোষ এবং একটি চাবি থাকে তাহলে চাবি বন্ধ করলে পরে বর্তনীতে প্রবাহের মান শূন্য থেকে একটা স্থির মানে পৌঁছে। এই স্থির মানে পৌঁছতে কিছু সময়ের প্রয়োজন। এই সময়ের মধ্যে তড়িৎপ্রবাহের মানের পরিবর্তনের জন্য বর্তনীতে ক্ষণিকের জন্য একটি আবিষ্ট তড়িৎপ্রবাহের সৃষ্টি হয় যা মূল প্রবাহকে বাধা দেয়। তড়িৎপ্রবাহ স্থির মানে পৌঁছে গেলে আর আবেশী প্রবাহ থাকে না কারণ তখন তড়িৎ বর্তনীর মধ্য দিয়ে অতিক্রান্ত ক্ষেত্ররেখার সংখ্যাও স্থির হয়ে যায়।

চিত্র :৫.৯

বর্তনীর তড়িৎপ্রবাহ বন্ধ করে দিলেও আবার একই রকম ঘটনা ঘটে । এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ স্থির মান থেকে তড়িৎপ্রবাহ শূন্যে নেমে আসে। ফলে বর্তনীতে অতিক্রান্ত চৌম্বক ফ্লাক্স পরিবর্তিত হয় যা বর্তনীতে আবিষ্ট প্রবাহ উৎপন্ন করে। বর্তনী বিচ্ছিন্ন করার সময় এই আবেশী তড়িৎপ্রবাহকে অতিরিক্ত তড়িৎপ্রবাহ বলে। এই তড়িতের জন্য কোনো বর্তনীকে বিচ্ছিন্ন করার সময় স্ফুলিঙ্গের সৃষ্টি হয়।

একটি মাত্র বর্তনীতে তড়িৎপ্রবাহের পরিবর্তনের ফলে অথবা কোনো চৌম্বকক্ষেত্রে বর্তনীর গতির ফলে বর্তনীর সাথে সংশ্লিষ্ট চৌম্বক ফ্লাক্সের পরিবর্তন ঘটে। এই পরিবর্তনের জন্য যে তাড়িতচৌম্বক আবেশ ঘটে তাকে স্বকীয় আবেশ বলে।

 

স্বকীয় আবেশ গুণাঙ্ক

ধরা যাক, কোনো কুণ্ডলীতে I প্রবাহের জন্য অতিক্রান্ত চৌম্বক ফ্লাক্স ), তাহলে, φI

...  (5.8)

এখানে, L সমানুপাতিক ধ্রুবক। একে কুণ্ডলীয় স্বকীয় আবেশ গুণাঙ্ক বলে। যদি  I= 1 একক হয় তাহলে, φ = L হয়। 

কোনো কুণ্ডলীতে একক তড়িৎ প্রবাহিত হলে কুণ্ডলীতে সংযুক্ত মোট চৌম্বক ফ্লাক্সকে ঐ কুণ্ডলীর স্বকীয় আবেশ গুণাঙ্ক বলে।

আবার আমরা জানি,

=-dφdt

  =-ddt=-LdIdt… (5.9)

  তড়িচ্চালক শক্তি তড়িৎ প্রবাহ পরিবর্তনে বাধা দান করে তাই সমীকরণে বিয়োগ বোধক চিহ্ন L কে ধনাত্মক ধ্রুবকে পরিণত করবে।

 অর্থাৎ কোনো বর্তনীতে প্রবাহিত তড়িৎপ্রবাহ একক হারে পরিবর্তিত হলে যে আবিষ্ট তড়িচ্চালক শক্তির উদ্ভব হয় তাকে স্বকীয় আবেশ গুণাঙ্ক বলে। 

কুণ্ডলীতে পাক সংখ্যা N হলে,

ε=-NLdIdt

স্বকীয় আবেশ গুণাঙ্কের একক : স্বকীয় আবেশ গুণাঙ্কের একক হেনরি (Henry), এর সংকেত H কোনো কুণ্ডলীতে তড়িৎপ্রবাহ প্রতি সেকেন্ডে এক অ্যাম্পিয়ার হারে পরিবর্তিত হলে যদি ঐ কুণ্ডলীতে এক ভোল্ট তড়িচ্চালক শক্তি আবিষ্ট হয় তাহলে ঐ কুণ্ডলীর স্বকীয় আবেশ গুণাঙ্ককে এক হেনরি বলে। অর্থাৎ

1 H=1V1As-1=1V sA-1

আবার L=φI সম্পর্ক থেকে দেখা যায়

1 WbA-1

Content added || updated By

দুটি কুণ্ডলী P ও S বিবেচনা করা যাক। এদের পরস্পরের কাছাকাছি রাখা হয়েছে। P কুণ্ডলীর সাথে সংযুক্ত রয়েছে একটি ব্যাটারি E ও একটি টেপা চাবি K এবং S কুণ্ডলীর সাথে সংযুক্ত রয়েছে একটি গ্যালভানোমিটার G [চিত্র 5.10]। P কুণ্ডলীকে বলা হয় প্রাথমিক বা মুখ্য কুণ্ডলী এবং S কুণ্ডলীকে বলা হয় গৌণ কুণ্ডলী। মুখ্য কুণ্ডলী P এর K চাবিতে চাপ দিলে, গৌণ কুণ্ডলী S এর গ্যালভানোমিটার G এর কাঁটার বিক্ষেপ ঘটে। চাবির চাপ ছেড়ে দিলে গ্যালভানোমিটারের কাঁটার বিক্ষেপ ঘটে বিপরীত দিকে। পারস্পরিক আবেশের জন্য এরূপ হয় ।

চিত্র :৫.১০

K চাবিতে চাপ দিলে P কুণ্ডলীতে তড়িৎ প্রবাহ শূন্য থেকে বৃদ্ধি পেয়ে সর্বোচ্চ মানে পৌঁছায় । তড়িৎ প্রবাহের এই বৃদ্ধির সময় কুণ্ডলী P তে চৌম্বক ফ্লাক্স তৈরি হতে থাকে। গৌণ কুণ্ডলী S মুখ্য কুণ্ডলী P-এর খুব কাছাকাছি থাকায় S কুণ্ডলীর সাথে জড়িত চৌম্বক ফ্লাক্সও বৃদ্ধি পেতে থাকে। ফলে গৌণ কুণ্ডলী S এ আবিষ্ট প্রবাহ উৎপন্ন হয়। গৌণ কুণ্ডলী S এর আবিষ্ট প্রবাহের অভিমুখ এ রকম হয় যে এটি মুখ্য কুণ্ডলী P এর ব্যাটারির প্রবাহের বৃদ্ধিকে বাধা দেয়। গ্যালভানোমিটারের বিক্ষেপ ঘটে গৌণ কুণ্ডলীতে আবিষ্ট প্রবাহ উৎপন্ন হওয়ার ফলে। 

   কোনো একটি কুণ্ডলীতে তড়িৎ প্রবাহ পরিবর্তন করলে নিকটবর্তী অন্য একটি কুণ্ডলীতে যে তাড়িতচৌম্বক আবেশ সৃষ্টি হয় তাকে পারস্পরিক আবেশ বলে।

 

পারস্পরিক আবেশ গুণাঙ্ক

কোনো মুখ্য কুণ্ডলীতে I তড়িৎ প্রবাহের জন্য গৌণ কুণ্ডলীতে সংযুক্ত চৌম্বক ফ্লাক্স যদি ϕ হয় তাহলে,

φI

বা, φ=MI

    এখানে, M সমানুপাতিক ধ্রুবক। একে পারস্পরিক আবেশ গুণাঙ্ক বলে। I = I একক হলে,  φ = M হয়। 

   কোনো মুখ্য কুণ্ডলীতে একক তড়িৎ প্রবাহের জন্য গৌণ কুণ্ডলীতে সংযুক্ত চৌম্বক ফ্লাক্সকে পারস্পরিক আবেশ গুণাঙ্ক বলে।

ε=-dφdt=-ddt

=-MdIdt 

এখানে dIdtহলো ঐ নির্দিষ্ট মুহূর্তে P কুণ্ডলীর প্রবাহের পরিবর্তনের হার। বিয়োগ চিহ্ন দিয়ে আবিষ্ট তড়িচ্চালক শক্তির প্রতিরোধী প্রকৃতি বোঝানো হচ্ছে।

   অর্থাৎ কোনো মুখ্য কুণ্ডলীতে তড়িৎপ্রবাহ একক হারে পরিবর্তিত হলে গৌণ কুণ্ডলীতে যে আবিষ্ট তড়িচ্চালক শক্তি উৎপন্ন হয় তাকে পারস্পরিক আবেশ গুণাঙ্ক বলে।

পারস্পরিক আবেশ গুণাঙ্কের এককও হেনরি (H)

পারস্পরিক আবেশের ব্যবহার

রূপান্তরক বা ট্রান্সফর্মার

সংজ্ঞা : যে যন্ত্রের সাহায্যে পর্যাবৃত্ত বা দিক পরিবর্তী উচ্চ বিভবকে নিম্ন বিভবে এবং নিম্ন বিভবকে উচ্চ বিভবে রূপান্তরিত করা যায় তাকে রূপান্তরক বা ট্রান্সফর্মার বলে। তড়িতচৌম্বক আবেশের উপর ভিত্তি করে এই যন্ত্র তৈরি করা হয়। ট্রান্সফর্মার সাধারণত দু প্রকারের হয়। যথা-

১. আরোহী বা স্টেপ আপ ট্রান্সফর্মার ও 

২. অবরোহী বা স্টেপ ডাউন ট্রান্সফর্মার।

   যে ট্রান্সফর্মার অল্প বিভবের অধিক তড়িৎ প্রবাহকে অধিক বিভবের অল্প তড়িৎপ্রবাহে রূপান্তরিত করে তাকে আরোহী বা স্টেপ আপ ট্রান্সফর্মার বলে। আর যে ট্রান্সফর্মার অধিক বিভবের অল্প তড়িৎপ্রবাহকে অল্প বিভবের অধিক তড়িৎপ্রবাহে রূপান্তরিত করে তাকে অবরোহী বা স্টেপ ডাউন ট্রান্সফর্মার বলে।

গঠন : 

  একটি কাঁচা লোহার আয়তাকার মজ্জা বা কোর বা অন্তর্বস্তুর দুই বিপরীত বাহুতে অস্তরিত তার পেঁচিয়ে ট্রান্সফর্মার তৈরি করা হয় [চিত্র ৫.১১]। অন্তর্বস্তুর যে বাহুর কুণ্ডলীতে পরিবর্তী প্রবাহ বা বিভব প্রয়োগ করা হয় তাকে মুখ্য কুগুলী বলে আর যে কুণ্ডলীতে পর্যাবৃত্ত বা পরিবর্তী বিভব আবিষ্ট হয় তাকে গৌণ কুণ্ডলী বলে। আরোহী ট্রান্সফর্মারের মুখ্য কুণ্ডলীর চেয়ে গৌণ কুণ্ডলীতে পাক সংখ্যা বেশি থাকে। আর অবরোহী ট্রান্সফর্মারে মুখ্য কুণ্ডলীর পাক সংখ্যা গৌণ কুণ্ডলীর চেয়ে বেশি থাকে।

চিত্র :৫.১১

ধরা যাক, মুখ্য কুণ্ডলীতে εp পরবর্তী বিভব প্রয়োগ Ep করার ফলে এই কুণ্ডলীতে Ip, প্রবাহ পাওয়া গেল । এই প্রবাহ অন্তর্বস্তুকে চুম্বকিত করে চৌম্বক ক্ষেত্ররেখা উৎপন্ন করে যা মুখ্য কুণ্ডলীতে একটি আবিষ্ট তড়িচ্চালক শক্তি উৎপন্ন করে। এখন মুখ্য কুণ্ডলীর পাক সংখ্যা Np এবং প্রতি পাকে সংযুক্ত চৌম্বক ফ্লাক্স φ হলে,

εp=-Npdφdt… (5.12)

এখানে dφ /dt = মুখ্য কুণ্ডলীতে চৌম্বক ফ্লাক্সের পরিবর্তনের হার। চৌম্বক ফ্লাক্সের যদি কোনো ক্ষরণ না হয় তাহলে গৌণ কুণ্ডলীর প্রতি পাকেও একই ফ্লাক্স সংযুক্ত হবে ফলে গৌণ কুণ্ডলীতেও তড়িচ্চালক শক্তি আবিষ্ট হবে। গৌণ কুণ্ডলীর পাক সংখ্যা Ns এবং গৌণ কুণ্ডলীতে আবিষ্ট তড়িচ্চালক শক্তি Es হলে,

εp=-Nsdφdt.. (5.13)

(5.12) ও (5.13), সমীকরণ থেকে,

εpεs=NpNs

অর্থাৎ কুণ্ডলীদ্বয়ের তড়িচ্চালক শক্তি এদের পাক সংখ্যার সমানুপাতিক।

এখন শক্তির নিত্যতা সূত্রানুসারে ট্রান্সফর্মারের উভয় কুণ্ডলীর ক্ষমতা সমান হবে অর্থাৎ মুখ্য কুণ্ডলীতে প্রতি সেকেন্ডে ব্যয়িত শক্তি গৌণ কুণ্ডলীতে প্রতি সেকেন্ডে উৎপন্ন শক্তির সমান হবে। অর্থাৎ অন্তর্গামী ক্ষমতা = বহির্গামী ক্ষমতা

:- εplp εsls

যখন, Ns > Np,তখন  εp> ६ অর্থাৎ ট্রান্সফর্মারটি আরোহী বা স্টেপ-আপ। আবার যখন, Np > Ns. তখন Ep> Es এক্ষেত্রে ট্রান্সফর্মারটি অবরোহী বা স্টেপ ডাউন ।

Content added || updated By